রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮: বিশ্বকাপে জার্মানি: পারবে কি ব্রাজিলকে ছুতে?
জার্মান ফুটবল দল বা Die deutsche Fußballnationalmannschaft (উচ্চারণ নিজের মত করে নিন) ঐতিহ্যবাহী জার্মান ফুটবলের কথা বলতে গেলে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় জার্মান ফুটবল এসোসিয়েশন-ডিএফবি এর কথা (DFB)। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০০ সালের ২৮ জানুয়ারী জার্মানির লাইপজিগ নামক শহরে৷ জার্মান ফুটবল দলের কিছু নাম বিদ্যমান যেমন, ডাই মানশ্যাফ্ট (দ্য টিম), অজার্মানভাষী গণমাধ্যমে ব্যবহৃত হয়।
বিশ্বকাপে জার্মানি: পারবে কি ব্রাজিলকে ছুতে?

ডাই ডিএফবি-এল্ফ (ডিএফবি একাদশ) প্রফেসর ডক্টর ফ্যার্ডিনান্ড হ্যুপে এর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷ জার্মান ফুটবল ফেডারেশন কে ১৯৫০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই দলটিকে পশ্চিম জার্মানি হিসেবে অভিহিত করা হতো। কোল্ড ওয়ার সংক্রান্ত কিছু ইস্যু সেই সময় ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ডিবিএফ মূলত ফেডারেল রিপাব্লিক অফ জার্মানিকে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই এই নামে অবিহিত করা হয়। ভার্সাই চুক্তি সহ অন্যান্য সমস্যার জন্য জার্মানির অর্থনীতি ভেঙ্গে পরেছিল। তাই প্রথম বারে জার্মানি বিশ্বকাপে অংশ গ্রহণ করতে পারেনি। কিন্তু প্রথম বারের মত বিশ্বকাপে (১৯৩৪) অংশ গ্রহণ করেই তৃতীয় স্থান দখল করে নেয়।
পৃথিবীর রাজনীতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছিল। জার্মান কর্তৃক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়৷ হিটলার অবশ্য এই ফুটবল নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিল। যুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে জার্মান ফুটবল এসোসিয়েশন – ডিএফবিকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়৷ ১৯৫১ সালে এর অফিস ষ্টুটগার্ট থেকে ফ্রাংকফুর্ট ( এটা সেই ফ্রাঙ্কফুর্ট যেটা ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল অব থটের জন্য বিখ্যাত) মাইন এ স্থানান্তর করা হয়-যেখানে অফিসটি এখনো অবস্থিত।
আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল সহ অনেক দল থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় অন্যতম সফল দল তিনটির মধ্যে জার্মানি একটি। বিশ্বাকাপের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত দলটি চার চারবার ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপা ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা পেয়েছে এবং অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল ও ঠান্ডা মাথার দল হিসেবে ধরা হয়।

তদানীন্তন কালের ভঙ্গুর অর্থনীতির বাধা সত্ত্বেও জার্মান তার ফুটবল দলকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। দুই জার্মানি এক হলে এই ফুটবল দলের কার্যকারিতা আরো বৃদ্ধি পায়। চারবার করে শিরোপা জয়ের পাশাপাশি দলটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লীগের তিনবার ও বিশ্বকাপ ফুটবলে চারবার রানার্স-আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। যা জার্মান ফুটবল দলের পূর্ববর্তী সাফল্য কে আরো বাড়িয়ে দেয়। সেই সাথে তাঁরা চারবার বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল। এবং জার্মানি রিকন্সিলিয়েশানের আগে, ১৯৭৬ সালে পূর্ব জার্মানি অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয় করে।
আমরা যদি অন্যান্য ফুটবল দলের দিকে তাকায় তবে, হয় তাদের পুরুষ ফুটবল বেশ শক্তিশালী বা তাদের নারী ফুটবল দল, কিন্তু ফুটবল ইতিহাসে জার্মানি-ই একমাত্র দেশ যারা পুরুষ ও নারী উভয় ফুটবল বিশ্বকাপে শিরোপা অর্জন করেছে। জার্মানিতে ফুটবলের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। সরকারি ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এসব নেয়। ফুটবল হলো একটি খেলা যা যেকোন জাতি আয়ত্ত করতে পারে, যদি সেই জাতি ইচ্ছা পোষণ করে এবং যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে।
আমাদের দেশেও ফুটবল কে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দ্বারা আন্তর্জাতিক মানের করা যায়। জার্মানি তার ফুটবল দলের নাম ১৯৯০ সালে জার্মানি দলটির ফিফার প্রাতিষ্ঠানিক কোড ‘Germany FR’ (FRG) থেকে পরিবর্তিত হয়ে ‘Germany’ (GER) হয়। কিন্তু কার্যকারিতা সেই আগের মতই দুর্দান্ত। প্রথম দিকে জার্মান ফ্রান্স দ্বন্দ্ব ছিলো এবং এই সমস্যা এদের ফুটবল টিমেও দেখা যেতো। কিন্তু এখান আর সেইসব দ্বন্দ্ব নেয়।
এক নজরে বিশ্বকাপে জার্মানি
বছর | অবস্থান |
---|---|
১৯৩০ | অংশগ্রহন করেনি |
১৯৩৪ | সেমি ফাইনাল (৩য়) |
১৯৩৮ | প্রথম রাউন্ড |
১৯৫০ | নিষিদ্ধ |
১৯৫৪ | চ্যাম্পিয়ন |
১৯৫৮ | সেমি ফাইনাল (৪র্থ) |
১৯৬২ | কোয়ার্টার ফাইনাল |
১৯৬৬ | রানার্সআপ |
১৯৭০ | সেমি ফাইনাল (৩য়) |
১৯৭৪ | চ্যাম্পিয়ন |
১৯৭৮ | নক আউট পর্যায় |
১৯৮২ | রানার্সআপ |
১৯৮৬ | রানার্সআপ |
১৯৯০ | চ্যাম্পিয়ন |
১৯৯৪ | কোয়ার্টার ফাইনাল |
১৯৯৮ | কোয়ার্টার ফাইনাল |
২০০২ | রানার্সআপ |
২০০৬ | সেমি ফাইনাল (৩য়) |
২০১০ | সেমি ফাইনাল (৩য়) |
২০১৪ | চ্যাম্পিয়ন |
Sources:
- উইকিপিডিয়া
- Bisag.com
- BBC.com