টপ ৫: বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধ বিমান

বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত ও ধনী দেশগুলো তাদের জনগণের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিশ্চিত এবং ভিনদেশের আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজ দেশকে সুরক্ষিত রাখতে সামরিক বাহিনীতে প্রচুর টাকা খরচ করে। যার ফলে তাদের দখলে দেখা বেশ কিছু অত্যাধুনিক সামরিক পরিবহণ এবং অস্ত্রশস্ত্র। আর এদের মধ্যে যুদ্ধ বিমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত এসব যুদ্ধ বিমান নির্মাণ খুবই ব্যয়বহুল। আর কিছু কিছু যুদ্ধ বিমান এর দাম তো আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। তো চলুন দেখে নেই বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধ বিমান গুলো সম্পর্কে:

সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধ বিমান

(Top 5 Most Expensive Military Aircraft)

ভিএইচ-৭১ কেস্ট্রল

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধ বিমান এর ৫ম স্থানে রয়েছে ভিএইচ-৭১ কেস্ট্রল (VH-71 Kestrel)। এটি আসলে AgustaWestland AW101 হেলিকপ্টার এর উন্নত সংস্করণ। প্রথমদিকে এটি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ানের জন্য তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়। তবে অত্যাধিক খরচের জন্য ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তৎকালিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই প্রোজেক্ট বন্ধের নির্দেশ দেন (পরে আবার নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়)। কারন এর খরচ প্রায় ২৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। হেলিকপ্টারটি যে কোনো আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত। এটি সকল আবহাওয়ায় চলাচলে সক্ষম। মার্কিন এই হেলিকপ্টারটি সেনা পরিবহন, যুদ্ধক্ষেত্র সহায়তা, অনুসন্ধান ও উদ্ধার, সামুদ্রিক নজরদারিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বোয়িং পি-৮এ পসাইডন

লিস্টের পরবর্তী স্থানে আছে বোয়িং পি-৮এ পসাইডন (Boeing P-8A Poseidon)। এই বোয়িং পি-৮এ পসাইডন বিমানটিকে আমেরিকান নেভির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিলিটারি মিশনে কাজ করার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে যার ফলস্বরূপ এটি এন্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার, এন্টি-স্পিরিট ওয়ারফেয়ার এবং শিপিং ইন্টারঅ্যাকশন এর মত আচরন করে, যার সাথে আছে ইলেকট্রনিক সিগন্যাল বুদ্ধিমত্তা। এটি সাধারনত টর্পেডো, SLAM-ER ক্ষেপণাস্ত্র, হার্পুন অ্যান্টি-শিপ মিসাইল এবং অন্যান্য অস্ত্রাদি বহন করে। এটি সনবুয় (Sonobuoys) ড্রপ এবং নিরীক্ষণ করতেও সক্ষম। বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের এই সামরিক সংস্করণটির মূল্যমান প্রায় ২৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সি – ১৭এ গ্লোবমাস্টার ৩

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধ বিমান এর ৩য় স্থানে রয়েছে সি – ১৭এ গ্লোবমাস্টার ৩ (C-17A Globemaster III)। এই বোয়িং বিমানটি মার্কিন বিমান বাহিনীর জন্য নির্মিত হয়েছিল এবং এটিই মার্কিন সামরিক পরিবহনের সবচেয়ে বড় বিমান। এটি আমেরিকার বিভিন্ন কৌশলগত মিশনে, সৈন্য এবং মাল পরিবহনে, চিকিৎসা নিরস্ত্রীকরণে ব্যবহার করা হয়। চারটি অতিকায় টার্বোফ্যান ক্রমাগত প্রপেল করে চলে এই গ্লোবমাস্টারকে। বোয়িং ৭৫৭ তে যে ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছিলো ঠিক সেই ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে এতে। প্রতিবারে ১০২ জন প্যারাট্রুপার ড্রপ করতে পারে এই সি – ১৭এ গ্লোবমাস্টার ৩। এর সাহায্যেই ইরাক এবং আফগানিস্তানে জরুরী ত্রান এবং সাহায্য পাঠানো হয়েছিলো। আমেরিকান এই সি – ১৭এ গ্লোবমাস্টার ৩ এর দাম প্রায় ৩২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এফ-২২ রেপটর

লিস্টের ২য় স্থানে আছে এফ-২২ রেপটর (F-22 Raptor)। আমেরিকান এই স্টিলথ ফাইটার এফ-২২ রেপটর ই যে বর্তমান সময়ের সেরা ফাইটার এ বিষয়েও কোনো সন্দেহ নেই। স্টিলথ টেকনোলজি, অসাধারন ম্যানুভারিটি ও গতি, অত্যাধুনিক ইলেকট্রিক সেন্সর ব্যবস্থা – সব মিলিয়ে এফ-২২ রেপটর সত্যিই অসাধারন। লকহীড মার্টিন দ্বারা মার্কিন বিমান বাহিনীর জন্য নির্মিত এই বিমানটিতে রয়েছে ২টি ইঞ্জিন, ১ টি আসন এবং সমস্ত আবহাওয়ায় স্টিলথ টেকনোলজির (গোপন থাকা) সক্ষমতা। এই এফ-২২ রেপটর বিমানটি দূরবর্তী মিশাইলকে ধ্বংস করতে পারে, সুপারসনিক গতিতে উড়তে পারে এবং প্রায় সব ধরনের রাডার সনাক্তকরণ এড়াতে পারে। এই এফ-২২ রেপটর এর দাম প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোম্বার

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধ বিমান হলো বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোম্বার (B-2 Spirit Stealth Bomber) যা শুধুমাত্র স্টিলথ বোম্বার নামেও পরিচিত। এটি আসলে একটি আমেরিকান ভারী বোমারু বিমান যা তৈরি করেছে নর্থরোপ গ্রুমম্যান। বিমানটিকে সহজে রাডারে শনাক্ত করা যায় না। একে নির্মাণ করা হয়েছে খুব বড় ধরনের আকাশ পথের যুদ্ধের উপযোগী করে। আমেরিকান এই বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোম্বারটি প্রচলিত বোমার সাথে সাথে নিউক্লীয়ও বোমাও বহন ও বর্ষণ করতে পারে। বি-২ স্পিরিট-ই একমাত্র বিমান যা দূর আকাশে থেকেও নিজের অবস্থান গোপন করে মাটিতে নির্দিষ্ট লক্ষমাত্রায় বোমা ছুড়তে পারে।

এটি ৮০ টি ৫০০ পাউন্ড (২৩০ কেজি) এর জেডিএএম জিপিএস নিয়ন্ত্রিত বোমা কিংবা ১৬ টি ২,৪০০ পাউন্ড (১,১০০ কেজি) এর বি৮৩ নিউক্লিয়ার বোমা অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থানেও ফেলতে পারে। বর্তমানে আমেরিকান বিমান বাহিনী মোট ২০টি বি-২ স্পিরিট পরিচালনা করছে। তবে এই বিমানগুলো স্নায়ু যুদ্ধকে সামনে রেখে নির্মাণ হলেও পরবর্তীকালে এগুলো ১৯৯৯ সালে ঘটিত কসোভো যুদ্ধে, ইরাক যুদ্ধে ও ২০০১-এর আফগানিস্তান যুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়েছে। আমেরিকান এই বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোম্বার এর মূল্যমান প্রায় ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।