সাহারা মরুভূমি: বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মরুভূমি

সাহারা মরুভূমি
দ্য গ্রেট ডেজার্ট নামে পরিচিত আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি (Sahara Desert) পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মরুভূমি। প্রায় ৯৪ লক্ষ বর্গকিমি’র এই বিশাল মরুভূমি আফ্রিকার অনেকটা জুড়েই অবস্থিত। এর বাহিরে মিশর, মরক্কো, আকজেরিয়া, তিউনেশিয়া, সুদান, নাজার, মালি সহ আরও কিছু জায়গায় এর বিস্তৃতি রয়েছে। আরবি শব্দ সাহারা থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে।
সাহারার আবহাওয়া মাত্রাতিরিক্ত গরম আবার শুকনো। অবশ্য এই গরম শুধু দিনের বেলাতেই, রাতে তীব্র শীত পড়ে-কখনো কখনো পাহারের চুড়ায় বরফও জমতে দেখা যায়। শীতকাল ও গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা -১০ থেকে ৪৩ ডিগ্রী সে. পর্যন্ত ওঠানামা করে। এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০ সেমি কাছাকাছি। কখনো কখনো মরুভূমিতে হানা দেয় ভয়ংকর ধুলিঝড়।
পুরো সাহারা মরুভূমি জুড়েই আছে নানা আকৃতির পাহাড়,পর্বতীয় মালভূমি, ধূধূ বালি আর প্রায় অনূর্বর অসমতল ভূমি। বেশ কিছু মরূদ্যানও আছে এখানে। এসব মরুদ্যানেই সাহারার বেশির ভাগ লোক বাস করলে। কিছু কিছু যাযাবর উপজাতিরা বাস করে আরো মরুভূমির আরও দুর্গম অঞ্চলে। এদের সবাইকে নিয়ে সাহারা মরুভূমি জুড়ে এর লোকসংখ্যা মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষ। এদের মূল জীবিকা ছাগল, ভেড়া, উট পালন আর খেজুড়, গম, বার্লি সহ নানাধরনের চাষবাদ ।
মরুভূমি বলে যে সাহারা একেবারে ফেলনা, তা নয়। নানান ধরেন মূল্যবান খনিজ পদার্থ রয়েছে সাহারা মরুতে। বিশেষ করে মরুভূমির লিবিয়া ও আলজেরিয়া অংশে রয়েছে প্রচুর খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ। আরো রয়েছে তামা, লোহা, ফসফেট ইত্যাদি অনেক খনিজ পদার্থ সহ বিভিন্ন আকরিক।

সাহারা মরুভূমি মানুষের তৈরি?
প্রায় ১৪ হাজার বছর আগে সাহারার প্রাকৃতিক পরিবেশ অন্যরকম ছিল বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। তারা বলছেন, সাহারা অঞ্চল একসময় সবুজই ছিল কিন্তু পরে তা ধূধূ মরুভূমিতে পরিণত হয়। এ পরিবর্তনের পেছনে এতদিন প্রাকৃতিক কর্মকাণ্ডকেই ভাবা হতো। ফ্রন্টিয়ারস ইন আর্থ সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে একেবারে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেখানে সিওল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করছেন, সাহারা মরুভূমি মানুষের তৈরি। সাহারা অঞ্চলের পশুপালন-সভ্যতার নিদর্শনগুলিকে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, দক্ষিণ সাহারায় একসময়ে এই সভ্যতা রীতিমতো জীবন্ত ছিল।
আনুমানিক ৮০০০ বছর আগে নীল নদের অববাহিকায় এক পশ্চিমদিকমুখী সবুজায়ন দেখা যায়।পরবর্তীতে পশুপালন অর্থনীতি ক্রমে কৃষির দিকে সরে যায়। পশ্চিমের দিকে উর্বরজমির সন্ধানে মানুষের অভিপ্রয়াণ চলতে থাকে। সাহারা একসময় ক্রমেই মানবশুন্যে হয়ে পড়ে। পশুপালনেরফলে সবুজভূমি আগেই ধ্বংস হয়েছিল, কারণ পশুপালনের উপযোগী চারণভূমি তৈরি করতে বিপুল হারে গাছ কাটে অধিবাসীরা।ফলে বৃষ্টি স্বভাবতই কমে আসে এ অঞ্চলে।
সাহারার মরুতে পরিণীত হওয়া যেন বনের প্রতি আমাদের জিঘাংসার পরিণীত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। গবেষকরা দাবি করেছেন, সাহারা নিয়ে আরও বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন যা ১৮০০ শতকের মানব সভ্যতা নিয়ে আমাদের নতুন তথ্য জানাবে।
লেখক: Pritom Pallav