টপ ৫: ফেলুদা সিরিজের মতো আরো ৫ টি সিরিজ
ভারতীয় লেখক ও চলচিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের লেখা বিখ্যাত গোয়েন্দা সিরিজ ফেলুদা (Feluda Series)। ১৯৬৫ সালে এই সিরিজের প্রথম গল্প পত্রিকায় প্রকাশিত হলে পাঠকদের কাছে সাড়া পরে। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এই সিরিজের মোট ৩৫ টি সম্পূর্ণ ও চারটি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ফেলুদার রহস্য খুব জটিল। সিরিজের বিভিন্ন গল্পে ফেলুদাকে দেখা যায় কোনো ঘটনাকে অসম্ভব ভালো বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের ক্ষমতার উপরেই যেকোনো রহস্যের সমাধান করতে পছন্দ করে। ফেলুদার রহস্য অনেক সময়ই কলকাতর বাইরেও বিস্তার লাভ করে থাকে। সত্যজিৎ রায় তার ছোটবেলায় পড়া শার্লক হোমসের গোয়েন্দা গল্পের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই ফেলুদার চরিত্রের সাথে অনেক জায়গায় আমরা হোমসের আর ফেলুদার ভাই ও সহকারি তোপসের সাথে হোমসের সহকারি ওয়াটসনের মিল দেখতে পাই। বইটি অবশ্যই পড়ে দেখবেন (যদি না পড়ে থাকেন)। আর এই পর্বে সত্যজিৎ রায়ের এই বিখ্যাত গোয়েন্দা সিরিজ ফেলুদা সিরিজের মতো আরো ৫ টি সিরিজ নিয়ে আলোচনা করব।
ফেলুদা সিরিজের মতো আরো ৫ টি সিরিজ
শার্লক হোমস সিরিজ

ফেলুদা সিরিজের মতো আরো ৫ টি সিরিজ এর শুরু করছি শার্লক হোমস সিরিজ দিয়ে। গোয়েন্দা সিরিজ পছন্দ করে কিন্তু শার্লক হোমসের নাম শুনে নি এমন লোক পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। শার্লক হোমস মূলত স্কটিস লেখক ও চিকিৎসক স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের লেখা বিখ্যাত কাল্পনিক গেয়েন্দা সিরিজ। গল্পে দেখা যায় হোমস একজন উচ্চমেধাসম্পন্ন লন্ডন ভিত্তিক প্রোফেশনাল ডিটেক্টিভ।হোমস ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পর্যবেক্ষণ থেকে বিরাট বিরাট সিদ্ধান্ত গ্রহণ,যে কোনো প্রকার ছদ্মবেশ ধারণ ও ফরেনসিক বিজ্ঞানে দক্ষতা থাকায় জটিল মামলার সমাধান বের করে দেওয়ার জন্য তার খ্যতি বিশ্বজুড়ে।
হোমস কাহিনির পটভূমির সময়কাল ১৮৮০ থেকে ১৯০৭ সাল এবং শেষ ঘটনাটির সময়কাল ১৯১৪ সাল ছিল।১৮৯১ সালে এই সিরিজের একটি গল্প পত্রিকায় প্রকাশ হলে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে।স্যার ডয়েল হোমসকে নিয়ে প্রথম উপন্যাস আকারে লিখেন ১৮৮৭ সালে। “আ ট্যাঙ্গলড স্কিন” উপন্যাসে জন্ম হয় ডিটেক্টিভ শার্লক হোমসের। এরপর “আ স্টাডি ইন স্কারলেট” আবার শার্লক হোমস কে বিশ্বে বিখ্যাত করে তুলে। বাংলাসহ বিশ্বের প্রায় ভাষায় এই সিরিজের অনুবাদ পাওয়া যায়।গোয়েন্দা হতে হলে এই সিরিজটি আপনাকে অবশ্যই পড়তে হবে।
ব্যোমকেশ বক্সী সিরিজ

ব্যোমকেশ বক্সী ভারতীয় লেখক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্ট গোয়েন্দা সিরিজ ও প্রধান চরিত্র। গল্পে ব্যোমকেশকে বেসরকারি ডিটেক্টিভ হিসেবে দেখা যায়। অতুল চন্দ্র মিত্র ছদ্মনামে কলকাতার চীনাবাজারের কাছে একটি মেসে বসবাস শুরু করে সে। নিজেকে গোয়েন্দা বা ডিটেক্টিভ নয়, সত্যান্বেষী পরিচয় দিতে পছন্দ করত। তার রুম মেটের কলমে লেখক শরবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশ চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছে।
ব্যোমকেশ সিরিজের প্রথম গল্প পথের কাঁটা ও দ্বিতীয় গল্প সীমন্ত হীরা লেখার পর শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশ সিরিজ লেখার পরিকল্পনা করেন। তিনি প্রথমে সত্যান্বেষী গল্প প্রকাশ করলে বেশ সাড়া পেতে থাকে। যার ফলে এটাকেই তার সিরিজের প্রথম গল্প হিসেবে ধরা হয়। এই সিরিজে তেত্রিশটি গল্প রয়েছে। প্রতিটি গল্পেই টান টান উত্তেজনা দেখা যায়। চুরি থেকে ধরে খুনের রহস্য উদ্ভঘাটন করতে ব্যোমকেশের চিন্তাধারা সত্যিই অবাক করে। সিরিজটি ভারত ও বাংলাদেশে ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। গোয়েন্দা গল্পপ্রেমী হলে সিরিজটি অবশ্যই আপনার জন্য।
তিন গোয়েন্দা সিরিজ

বাংলাদেশী লেখক রকিব হাসান ও শামসুদ্দীল নওয়াবের লেখা তিন গোয়েন্দা সিরিজ কিশোরদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এই থ্রিলার সিরিজটিতে রহস্য এডভেঞ্চারের মাঝে অলৌকিক বা ভৌতিক স্বাদ পাওয়া যায়। তবে তিন গোয়েন্দা পুরোপুরি মৌলিক কাহিনী নয়। ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন গোয়েন্দা কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে রচিত। বিশেষ করে প্রথম দিককার বইগুলো রবার্ট আর্থারের ইংরেজি সিরিজ “থ্রি ইনভেস্টিগেটরস” অবলম্বনে রচিত। আবার কিছু বই এনিড ব্লাইটনের “ফেমাস ফাইভ” অবলম্বনে রচিত।
সিরিজে প্রধান প্রধান চরিত্রে আছে পাশা, মুসা ও রবিন। তবে বিদেশী গল্পের অবলম্বনে হলেও, চরিত্রের নাম থেকে শুরু করে তাদের বিবরণ, তাদের আশেপাশের বিবরণ আর ঠিকানা সহ অনেক কিছুই লেখক নিজের মত করে লিখেছেন। সিরিজটি ১৯৮৫ সালে প্রথম প্রকাশ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত অনেকটাই জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। যারা রহস্য সমাধানে প্রচন্ড আগ্রহী, তবে রহস্য সমাধানের পাশাপাশি এডভেঞ্চারও পছন্দ, তাদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ এই তিন গোয়েন্দা সিরিজ।
কাকাবাবু সিরিজ

ফেলুদা সিরিজের মতো আরো ৫ টি সিরিজ বাছাই করতে গেলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সিরিজ থাকবেই থাকবে। এই সিরিজে প্রধান চরিত্র কাকাবাবু, ওরফে রাজা রায় চৌধুরী। কাকাবাবু চরিত্রটি সৃষ্টি করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান এবং বাংলা সাহিত্য পায় আর একটি অসাধারন চরিত্র। অন্য গোয়েন্দা চরিত্রের সাথে কাকাবাবুর মিল নেই। তাকে প্রফেশনাল গোয়েন্দা বলা যাবে না। তিনি টাকার বিনিময়ে কাজ করেন না। উপযুক্ত কেস পেলে তবেই ছুটে যান কাকাবাবু। আবার অনেক গোয়েন্দার মত তিনি একাই একশও নন কেননা তার একটি পায়ে সমস্যা আছে। ফলে তাকে ক্রাচ ব্যবহার করতে হয়।
তবে তাই বলে কাকাবাবুকে দূর্বল ভাবার কোন কারন নেই! দুহাতে তার প্রচন্ড শক্তি আর মনে তার অসীম সাহস। পায়ের অভাব অনেকটাই পূরণ করেছে তার ভাইপো সন্তু, কাকাবাবুর সহকারি। কিছু কিছু অভিযানে সন্তুর সক্রিয় অংশগ্রহন না হলে রহস্যের সমাধানই হতো না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই সিরিজটি ভারত ও বাংলাদেশে ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। রহস্য এবং অ্যাডভেঞ্চার গল্পপ্রেমী হলে সিরিজটি অবশ্যই আপনার জন্য।
পাণ্ডব গোয়েন্দা

পাণ্ডব গোয়েন্দা হল ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় রচিত এক কাল্পনিক গোয়েন্দাবাহিনী। এই গোয়েন্দাবাহিনী পাঁচজন কিশোর-কিশোরী নিয়ে গঠিত। এই দলে আরো আছে একটি কুকুর। দুঃসাহসী পাঁচটি ছেলেমেয়ে ও একটি কুকুর নিয়ে গঠিত পান্ডব গোয়েন্দারা নানারকম রোমাঞ্চকর অভিযান করে। কখোনো কখোনো তারা নিজেরাই বিপজ্জনক ঘটনায় জড়িয়ে যায়, আবার কখোনো কখোনো অন্য কারো সাহায্যার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ে আরো বড় বিপদের মুখে। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই দল গোয়েন্দাগিরি চালিয়েছে।
পান্ডব গোয়েন্দা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭০ সালে মাসিক শুকতারা পত্রিকায়। তারপর আনন্দমেলা পুজো সংখ্যাতেও পান্ডব গোয়েন্দার উপন্যাস বেরিয়েছে। পান্ডব গোয়েন্দার একাধিক ছোটগল্প ও উপন্যাস শিশু কিশোরদের কাছে সবিশেষ জনপ্রিয়তা পায়। এখন এই গোয়েন্দা গল্প ভারতীয় আকাশ বাংলা চ্যানেলে দেখানো হয়। তাই, তিন গোয়েন্দা ভালো লাগলে আপনার এই সিরিজটিও ভালো লাগবে বলেই আশা করি।
আরো আছে: মাসুদ রানা সিরিজ, অর্জুন সিরিজ, জেমস বন্ড সিরিজ ইত্যাদি।