টপ ৫: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেরা ৫ টি বই
কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্য কে সজ্জিত করেছেন নিজস্ব অলঙ্কারে। অপু-দূর্গার পথের পাঁচালী থেকে শঙ্করের চাঁদের পাহাড় তাকে চিনিয়েছে ভিন্ন দুটি রূপে। সমাজিক উপন্যাস থেকে রোমাঞ্চকর উপন্যাসে তার সফল অবদান। এই পর্বে সফল এই লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেরা ৫ টি বই নিয়ে আলোচনা করা হলো।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেরা ৫ টি বই
হীরা মানিক জ্বলে

হীরা মানিক জ্বলে প্রচ্ছদ
কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা হীরা মানিক জ্বলে বাংলা সাহিত্যের একটি বিখ্যাত উপন্যাস। রোমাঞ্চে ভরপুর এই উপন্যাসটি ১৯৪৬ সালে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। উপন্যাসে দেখা যায় সুশীল, একজন সাহসী বাঙালি ছেলে। সে সাথে শান্ত ও জামাতুল্লাকে নিয়ে আসেন ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি দ্বীপে। সেখানে তারা রোমাঞ্চকর এক অভিযানে যায়। যেখানে তারা আবিষ্কার করে প্রাচীন হিন্দু রাজ্যের রাজধানী এ রাজপ্রাসাদ। সেই ধ্বংস প্রাপ্ত রাজধানী শহরের মধ্যেই একটি গুহা এবং প্রচুর হিরে, অন্যান্য অমূল্য পাথর খুঁজে পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে জন্য বিপদ তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। সেখানে সুশীল তার সঙ্গী শান্তকে হারায়, উপন্যাসে সনতের মৃত্যু হয় ও উপন্যাসের সমাপ্ত ঘটে।
ইছামতী

ইছামতী প্রচ্ছদ
বিভূতিভূষণের লেখা ইছামতী উপন্যাস ১৯৫০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। ইছামতী নদীকে কেন্দ্র করে রচিত এই উপন্যাসে বিভূতিভূষণের জন্মস্থান বারাকপুর তথা নিশ্চিন্দিপুরের মোল্লাহাটির নীলকুঠির কথা বিধৃত হয়েছে। উনিশ শতকের নীলবিদ্রোহের পটভূমিতে সাধারণ মানুষের উত্থান-পতনের মর্মন্তুদ ইতিহাস ধরা পড়েছে এই উপন্যাসে। এই উপন্যাসের পটভূমি পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি করে। এছাড়া উপন্যাসটি জীবনের অনেক গভীর অব্যক্ত কথা সুনিপুন ভাবে উপলব্ধি করিয়ে দেয়।
চাঁদের পাহাড়

চাঁদের পাহাড় প্রচ্ছদ
চাঁদের পাহাড় লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় রোমাঞ্চকর উপন্যাস। ১৯৩৭ সালে গ্রন্থাকারে বের হওয়া উপন্যাসটি আজও বাঙালি রোমাঞ্চ প্রেমিদের কাছে জনপ্রিয়। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ভারতীয় এক সাধারণ তরুণ, নাম শঙ্কর। তার আফ্রিকা জয় করার কাহিনী নিয়েই চাঁদের পাহাড় সাজানো হয়েছে। শঙ্কর এক রেল স্টেশনে ক্লার্ক হিসেবে চাকরি নিয়ে রোমাঞ্চের সন্ধানে উগান্ডা পারি দেন। কিন্তু সেখানে তাকে মানুষ খেকো সিংহ থেকে ধরে ব্ল্যাক মাম্বা সাপের সাথে মোকাবেলা করতে দেখা যায়। একসময় তার সাথে পরিচয় এক পর্তুগিজ অভিযাত্রীকের, নাম ডিয়াগো আলভারেজ। যিনি স্বর্ণের সন্ধানে এখানে আসেন। আলভারেজ তাকে তার সময়ের ঘটনা বলে। সে এবং তার সঙ্গী জিম কার্টার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরক খনির সন্ধান পায়। কিন্তু ভয়ংকর জন্তু বুনিপ (পৌরাণিক কল্পিত জলচর প্রাণী) জিমকে মেরে ফেলে এবং আলভারেজ ফিরে আসতে বাধ্য হয়। সব শুনে ক্লার্কের চাকরি ছেড়ে শঙ্কর আলভারেজের সাথে বেরিয়ে পরে ঘন জঙ্গলে খনির সন্ধানে। শঙ্কর এবং আলভারেজ কি পারবে খনির সন্ধান পেতে? পারবে কি তারা বেঁচে ফিরতে? জানতে হলে পড়তে হবে চাঁদের পাহাড়।
অপরাজিত

অপরাজিত প্রচ্ছদ
অপরাজিত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় উপন্যাস। ১৯৩২ সালে প্রথম প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় পূনরায় আবার প্রকাশিত হয়। ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র অপু। অপুর কাহিনীর সম্প্রসারণই ‘অপরাজিত’ উপন্যাস। অপুর শৈশব থেকে কৈশোরে পদার্পণ এবং কলকাতায় কলেজে পড়ার সময়কার গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসে। এছাড়াও অপুর সন্তান কাজলকে নিয়ে উপন্যাসটি আরো সম্প্রসারীত করা হয়। কিন্তু, কাজলকে নিয়ে কাহিনীসৃষ্টির পূর্বেই বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় মারা যান। তার একমাত্র পুত্র তারাদাস বন্দোপাধ্যায় পরবর্তীতে অপু-কাহিনীর তৃতীয় খণ্ড হিসেবে বহু পরে ‘কাজল’ রচনা করেন।
পথের পাঁচালী

পথের পাঁচালী প্রচ্ছদ
“পথের পাঁচালী” বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা শিশু কিশোর উপন্যাস। উপন্যাসটির ছোটদের জন্য লেখা সংস্করন আম আঁটির ভেপু নামে পরিচিত। বিখ্যাত এই উপন্যাসটিতে তুলে ধরা হয়েছে গ্রাম বাংলার দুই ভাই বোনের শৈশব থেকে তাদের বেড়ে উঠা! পারিবারিক কাহিনী দ্বারা সজ্জিত উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অপু ও দূর্গা। সমগ্র উপন্যাসটি তিনটি খণ্ডে মোট পঁয়ত্রিশটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত। খণ্ড তিনটিতে এছাড়াও তুলে ধরা হয়েছে অপু-দুর্গার চঞ্চল শৈশব, দুর্গার বেদনাক্রান্ত মৃত্যু, অপুর সপরিবারে কাশীযাত্রা, অপুদের কাশীজীবন, অপুর বাবা হরিহরের মৃত্যু, অপুর মা সর্বজয়ার কাজের জন্য কাশীত্যাগ এবং পরিশেষে তাদের পৈত্রিক নিবাস নিশ্চিন্দিপুরে ফিরে আসার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। উপন্যাসে চঞ্চল শৈশব থেকে দূর্গার বিয়োগান্ত ও উপন্যাসের শেষ অংশ সত্যিই মনকে শোকাহত করে তুলে।