বর্তমানে আমাদের দেশে একটি ভয়াবহ আতংকের নাম ডেঙ্গু রোগ। আর রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয় আরো অনেক দেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। যার মধ্যে আছে ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডে, ব্রাজিল, হন্ডুরাস সহ আরো অনেক দেশ।
ডেঙ্গু রোগ কি?
ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। এটি খুব পীড়াদায়ক রোগের একটি। এই জ্বরে আক্রান্ত হলে একদিকে যেমন শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে অন্যদিকে এর রেশ থেকে যায় দীর্ঘদিন। তবে ডেঙ্গু সবসময়ই প্রাণঘাতি কোনো রোগ নয়। বিশ্রাম ও নিয়মমাফিক চললে এ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ডেঙ্গু সর্বপ্রথম ১৭৭৯ সালে দেখা দেয়। ১৯৫০ সালে থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইনে এটি মহামারী আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বেশিরভাগ দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে খুবই দ্রুত। ২০১৯ সালেও ফিলিপাইনে ডেঙ্গুকে মহামারী ঘোষণা করা হয়। আর তখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ফিলিপাইনে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছিল।
ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রকারভেদ
ডেঙ্গু Flavi ভাইরাস পরিবারের একটি সদস্য। এর মোট চারটি Serotype রয়েছে। যেগুলো হলো DEN-1 , DEN-2 , DEN-3 এবং DEN-4। এই সেরোটাইপ গুলোর যেকোন একটি দিয়ে যদি একবার আক্রান্ত হন তাহলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যদি কোন ব্যক্তি একটি সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পর অন্য আরেকটি সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয় তবেই ডেঙ্গু জটিল আকার ধারণ করে। ধরা যাক কেউ DEN-1 দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর DEN-2 দ্বারা আক্রান্ত হল তাহলেই ডেঙ্গু জটিল আকার ধারণ করবে।
ডেঙ্গু কিভাবে ছড়ায়?

এখন আমরা আলোচনা করব ডেঙ্গু কিভাবে ছড়ায়। ডেঙ্গু মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায় কিন্তু মানুষের থেকে মানুষের সরাসরি ছড়াতে পারেনা। Female Aedes Egyptii (এডিস ইজিপটাই) নামক মশার কামড়ের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এছাড়াও এই একই গোত্রের আরেকটি মশা Female Aedes Albopictus (এডিস অ্যালবোপিকটাস) এর কামড়েও ছড়াতে পারে। এই মশার কারণে আপনার আরো হতে পারে চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার এবং জিকা সংক্রমণ।
- ১. যখন একটি সুস্থ এডিস মশা একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষকে কামড় দেয় তখন মশাটি ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।
- ২. ভাইরাসটি ৮ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত মশাটির ভেতর বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারপর মশাটি পুরোপুরি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।
- ৩. মশা টি পুরোপুরি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর যত মানুষকে কামড় দিবে প্রত্যেকে এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবে।
- ৪. যখন মশা টি ডিম পাড়ে তখন প্রত্যেকটি লার্ভাতেই ভাইরাসটি বিদ্যমান থাকে এবং লার্ভা থেকে তৈরি হওয়া প্রত্যেকটি মশাই মানুষকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত করতে পারে।
এই ভাবেই আমাদের সমাজে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত মশাদের পরিমাণ। তাই আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে যাতে আক্রান্ত মশাগুলো কোনভাবেই ডিম পারতে না পারে।
এডিস মশার প্রজননের জন্য কেমন পরিবেশ প্রয়োজন?

আমাদের অনেকেরই ভুল ধারণা যে মশা শুধু ময়লা পানিতে জন্মগ্রহণ করে। আসলে এটি সঠিক নয়। কেননা এডিস মশা পরিষ্কার জমে থাকা পানিতে জন্মগ্রহণ করে। এডিস মশা মূলত দুই থেকে তিন দিনের জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে অথবা যেকোনো ফেলে রাখা পানিতে জন্মাতে পারে। এরা আর্দ্র জায়গায় ১৬ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় নিজেদের ডিম পাড়ে এবং বংশবিস্তার করে। এরা যেহেতু একটু স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় জন্মগ্রহণ করে তাই আমাদের উচিত আমাদের বাড়ির আঙিনা, বারান্দা এবং আমাদের আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
এডিস মশা চেনার উপায়

এডিস মশা চেনা খুবই সহজ। এদের পুরো শরীরই কালো এবং এই কালোর উপর সাদা সাদা দাগ টানা থাকে। পায়েও একই রকমের ডোরাকাটা থাকায় এদেরকে টাইগার মসকিউটো বা বাঘ মশা বলা হয়। বর্ষাকালে এদেরকে বেশি দেখা যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ দেখার আগে চলুন দেখে নেই ডেঙ্গু রোগের ধরণগুলো কি কি। ডেঙ্গু দুই ধরনের হয়। এরা হল:
- ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার / DF: সাধারণ জ্বরের মতোই। এতে ঘাবড়ানোর কোন কারন নেই।
- ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার/ DHF / DSS: এ ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুর সব লক্ষন ই থাকে। কিন্তু রক্তনালির লিকিং হয় বলে বাড়তি কিছু সমস্যা হয়।
সময়মতো ব্যাবস্থা গ্রহণ না করলে ডেঙ্গু রোগে জীবনের ঝুঁকি আসতে পারে। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার থেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বেশি মারাত্মক হয়। তবে সবগুলো জ্বরের লক্ষণ একই রকমই হয়। তো আসুন জেনে নেই ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলো কি কি।

- জ্বর: ডেঙ্গুর প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর। ছয় দিনের বেশি ডেঙ্গু জ্বর থাকে না। মশা কামড়ানোর চার থেকে সাত দিন পর শুরু হয় জ্বর।
- ব্যাথা: জ্বরের সাথে থাকতে পারে মাথাব্যাথা। এছাড়াও চোখের পিছনে ও হাড়ে প্রচুর ব্যাথা থাকতে পারে। হাড়ে প্রচুর ব্যাথা হওয়ার কারণে এই জ্বর এর আরেকটি নাম ব্রেক বোন ফিভার।
- রক্ত ক্ষরণ: শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত ক্ষরণ ও দেখা দিতে পারে যেমন নাক দিয়ে দাঁতের মাড়ি দিয়ে পায়ুপথে পেটের ভিতর অথবা ইনজেকশন দেয়া কোন জায়গায়। এছাড়াও মেয়েদের একবার মাসিক হওয়ার পরে ওই একই মাসে পুনরায় মাসিক দেখা দিতে পারে। লিকিং হলে অন্য উপসর্গ যেমন পেটে বা ফুসফুসে পানি আসতে বা রক্তে প্রোটিন কমে যেতে পারে।
- দানা (র্যাশ): এছাড়াও পুরো শরীরে রেশ হতে পারে যা ১ সেন্টিমিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। ডেঙ্গুর টিপিক্যাল রাশ বেরোয় জ্বরের ষষ্ঠ দিনে। তখন জ্বর থাকে না। এজন্য এটাকে Convalescent Confluent Petechial Rash বলে। পায়ে বা হাত থেকে শুরু হয়- দেখলেই চেনা যায়, খুঁজতে হয় না। ডেঙ্গুতে অন্য র্যাশও হতে পারে তবে সেগুলো টিপিক্যাল নয়।
- ফ্লাশিং: এছাড়াও আরেকটা জিনিস হয় জ্বরের প্রথমদিকে – রোগীর গায়ে চাপ দিলে আঙুলের ছাপ পড়ে যেটাকে ফ্লাশিং বলা হয়।
- অন্যান্য: তাছাড়া দুর্বল লাগা, অস্বস্তি ভাব, ডাইরিয়া, বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার
এই অবস্থাটাই সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরো যে সমস্যাগুলো হয়, তা হলো-শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়, যেমন চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে, মহিলাদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি। এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনীতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভারকে চারটা গ্রেডে ভাগ করা হয়। এগুলো হল :
- গ্রেড – ১: Tourniquet টেস্ট পজিটিভ হওয়া ছাড়া রক্তক্ষরণের আর কোনো আলামত থাকে না। এই টেস্টটি বিভিন্ন Diagnostic Center এ করা হয়।
- গ্রেড – ২: দৃশ্যত রক্তক্ষরণ থাকে না। তাই রক্তক্ষরণ দেখা না গেলেও জ্বরের সঙ্গে লিকিংয়ের উপসর্গ থাকলে সেটা ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার।
- গ্রেড – ৩: ১ বা ২ এর সঙ্গে ব্লাডপ্রেসার কমে, পালস বাড়ে।
- গ্রেড – ৪: ১ বা ২ এর সঙ্গে ব্লাডপ্রেসার, পালস না পাওয়া গেলে।
গ্রেড ৩ ও ৪-কে একসঙ্গে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম বলে। ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম বিশেষ করে গ্রেড-৪ প্রতিরোধ করতে না পারলে হয়।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম
আমরা পূর্বে অনেক বার ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এর কথা শুনেছি। আপনাদের অনেকের ই প্রশ্ন থাকবে কি এই ডেঙ্গু শক সিনড্রোম? চলুন এখন জেনে নেই কি এই সিনড্রোম। ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সাথে সার্কুলেটরী ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ হলো:
- রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া।
- নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
- শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
- প্রস্রাব কমে যায়।
- হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডেঙ্গুর ফেইজ
ডেঙ্গুকে তিনটা ফেইজে বা পর্যায়ে ভাগ করা হয়। এরা হল:
- ফেব্রাইল ফেইজ (Febrile phase): ফেব্রাইল ফেইজে জ্বর ও জ্বরের উপসর্গগুলো থাকে।
- এফেব্রাইল ফেইজ (Afebrile phase): এফেব্রাইল ফেইজে জ্বর চলে যায়। তবে এটাকে ক্রিটিক্যাল ফেইজও বলে। কারণ ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভারে এই স্টেজে মারাত্মক সব জটিলতা তৈরি হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর অন্য জ্বর থেকে আলাদা কারণ জ্বর চলে যাওয়ার পরই আসল সমস্যা হয়। এটা ২ দিন থাকে। জ্বর না থাকলেও এ সময় সতর্ক থাকতে হয়।
- কনভালেসেন্ট ফেইজ বা রিকোভারি ফেইজ (Convalescent Phase): কনভালেসেন্ট ফেইজ- অধিকাংশ রোগীই ভালো হয়ে যায় এই ফেইজে। তারপরও কেউ কেউ ভীষণ দুর্বল হয়। বিষণ্ণতায় ভোগে।
ডেঙ্গু হলে কি করবেন?
আতঙ্কিত না হয়ে ডেঙ্গুকে প্রতিরোধ করতে হবে সঠিক স্বাস্থ্যজ্ঞান ও চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে। কেননা ডেঙ্গু সবসময়ই প্রাণঘাতি কোনো রোগ নয়। আর বিশ্রাম ও নিয়মমাফিক চললে এ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চলুন দেখে নেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে কি করবেন:
- ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- Dengue NS1 অন্টিজেন টেস্ট
এছাড়া আপনি চাইলে নিজে থেকেও কোন একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে Dengue NS1 অন্টিজেন টেস্ট করে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই এটি জ্বরের চারদিনের মধ্যেই করতে হবে। যদি জ্বরের চারদিন পরে টেস্ট করেন তাহলে আপনাকে ডেঙ্গু Antibody টেস্ট করতে হবে। এর সঙ্গে অবশ্যই CBC / Complete Blood Count টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। এই টেস্টগুলো করার মাধ্যমে আপনি নিজেই জানতে পারবেন আপনার ডেঙ্গু হয়েছে কিনা বা হলেও সেটা কতটুকু মারাত্মক।
- সাবধানতা
তবে নিজে থেকেই টেস্ট করুন অথবা ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজের থেকে কোন চিকিৎসা করতে যাবেন না।
- সতর্কতা
শরীরের যে কোন অংশ থেকে রক্তপাত হলে, প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে, শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, জন্ডিস দেখা দিলে, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা

- ১. ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়, এমনকি কোনো চিকিৎসা না করালেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে ডেঙ্গু জনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়। ডেঙ্গু জ্বরটা আসলে একটা গোলমেলে রোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়। সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
- ২. প্যারাসিটামল ও পানিই ডেঙ্গুর আসল চিকিৎসা।
- ৩. ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। প্রতিদিন প্রায় তিন লিটারের মতো পানি আপনাকে পান করতে হবে।
- ৪. জ্বরের সময় ক্ষুধামন্দা হয়, বমি লাগে। এক্ষেত্রে ফলের রস খুবই উপকারী পানীয় এবং এতে অল্পতে বেশি ক্যালরি পাওয়া সম্ভব। স্বাভাবিক খাবারও খেতে হবে।
- ৫. সর্বদা ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
- ৬. আর সবসময় মশারির ভিতর থাকতে হবে যাতে আক্রান্ত মানুষটিকে কোন মশা কামড় দিতে না পারে।
ডেঙ্গু হলে খাবার-দাবার ও পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বিশেষ করে শিশুদের জ্বর হলে তারা খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দেয়। এ থেকে হতে পারে পানিশূন্যতাসহ নানা জটিলতা। বাড়িতে কারও ডেঙ্গু জ্বর হলে তাই কিছু খাবার বেশি খাওয়া উচিত এবং কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। চলুন দেখে নেই খাবার গুলো কি কি
ডেঙ্গু হলে কোন ধরনের খাবার খাবেন
- ডাবের পানি
- ডালিম
- কমলা
- পেয়ারা এবং পেয়ারা পাতা
- শাঁক এবং লতাপাতা জাতীয় খাবার।
- পেঁপে ও পেঁপে পাতা (?)
ডেঙ্গু হলে কোন ধরনের খাবার খাবেন না
- তেল বা তেলেভাঁজা খাবার
- মশলা যুক্ত খাবার
- কফি জাতীয় খাবার।
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
- ১. সবার আগে যেই জিনিস টা বিবেচনায় আনতে হবে তা হল নিজের ও নিজের পরিবার এর নিরাপত্তা। সেজন্য আমাদের সবসময় মশারি টানিয়ে ঘুমানো উচিৎ। প্রয়োজনে রুম এ মশা নাশক স্প্রে ব্যাবহার করতে হবে।
- ২. বাইরে বের হলে বড় হাতার পোশাক পড়ে বের হতে হবে। বিশেষ করে বর্ষা কালে যখন ডেঙ্গুর উপদ্রব বেশি থাকে।
- ৩. বাসা বাড়ির আঙ্গিনা, ঝোপঝাড়, বারান্দা, ফুলের টব, ইত্যাদি সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে কথাও বেশি দিন ধরে পানি জমে না থাকে।
- ৪. যদি কোথাও বেশিদিন যাবত পানি জমে থাকে যেমন ডোবা, নালা, ড্রেইন, এমনকি বৃষ্টির পানিও বেশিদিন জমে থাকে তবে তাও Bleaching Powder দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ডেঙ্গুতে যেসব ওষুধ খাবেন না
- ১. আপনি যদি মনে করেন Painkiller বা ব্যাথানাশক ওষুধ (এন.এস.এ.আই.ডি গ্রুপ যেমন, ডাইক্লোফেন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপারক্সেন, মেফেন) খেয়ে শরীর এর ব্যাথা কমাবেন। তাহলে কিন্তু আপনি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনছেন। কারন ব্যাথানাশক খেলে ডেঙ্গু আরো খারাপ আকৃতি ধারন করে আর রক্তপাত বেরে যাবে।
- ২. কখনই ফার্মেসি থেকে কিনে Antibiotic খাবেন না। কারন ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগ। আর Antibiotic আমরা ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগে খাই। তাই Antibiotic খেলে আপনার ডেঙ্গু ভালো হওয়ার কোন সম্ভাবনা ই নেই, বরং আর ক্ষতি হতে পারে (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে)।
- ৩. কখনই Steroid জাতীয় ওষুধ খাবেন না। কারন ডেঙ্গু জর এ Steroid এর কোন উপকারিতা নেই। বরং আপনাদের জন্য ক্ষতি এ ডেকে আনবে এটি।
- ৪. এসপিরিন/ক্রোপিডোপ্রেল (এন্টি প্লাটিলেট গ্রুপ) হৃদরোগীদের জন্য জ্বর থাকাকালীন ও প্লাটিলেট হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
- ৫. ওয়ারফারিন (এন্টিকোয়াগুলেন্ট) হৃদরোগীদের জন্য জ্বর থাকাকালীন ও প্লাটিলেট হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
আরো একবার বলছি, ডেঙ্গু খুব পীড়াদায়ক রোগ হলেও ডেঙ্গু সবসময়ই প্রাণঘাতি কোনো রোগ নয়। আতঙ্কিত না হয়ে ডেঙ্গুকে প্রতিরোধ করতে হবে সঠিক স্বাস্থ্যজ্ঞান ও চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে। কেননা ডেঙ্গু সবসময়ই প্রাণঘাতি কোনো রোগ নয়। আর বিশ্রাম ও নিয়মমাফিক চললে এ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে আরো তথ্য জানতে ভিজিট করুন: DrKhanSaheeb.com